ফেনী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে তরুণদের প্রতিক্রিয়া

ফেনীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বহুল প্রতিক্ষিত পৌরসভা নির্বাচন। এ নিয়ে প্রবীণদের মতো তরুণ ও নতুন ভোটারদের মাঝে অনেক আগ্রহ ছিল। ভোটের কয়েকদিন আগে থেকেই অনেক তরুণের ফেসবুক স্ট্যাটস এ তাদের প্রিয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় এবং অনেকে ফেসবুকে প্রার্থীদের ছবি ও প্রতীক সংবলিত ছবি পোষ্ট করে। নির্বাচনের দিন সকাল বেলা থেকেই ফেসবুকে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে। তবে বেশীরভাগ তরুণ-ই ভোটকেন্দ্র দখল, মারামারি ও অশান্ত পরিস্থিতি ও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোট দিতে না পেরে হতাশাই ব্যাক্ত করেছেন।

"নির্বাচনের নামে ফেনীতে ভোট ডাকাতি/অরাজকতা চলছে.. কাউন্সিলরের ভোট দিতে পারো কিন্তু মেয়রের ব্যালেট-ই নিতে দিচ্ছে না..!! হায় গণতন্ত্র.. হায় বাংলাদেশ..!!"- দিনের শুরুতে এক তরুণের স্ট্যাটাস ম্যাসেজ ছিল এটি। আরেক কলেজ ছাত্রের স্ট্যাটস ছিল আহ্বানমূলক। সে লিখেছিল - "আজ ভোট। চল সবাই ভোট দিতে যাই।" কিন্তু এর ঘন্টা চারেক পর সেই যুবকের স্ট্যাটাসে ছিল হতাশার সুর। সে লিখেছিল, "Everythings gonna darke quite dark...."।

ফেনীর এক তরুণ সাংবাদিকের স্ট্যাটাস ছিল এমন, "ভোট দিতে যাবো কি যাবো না ভাবছি। আমাদের কেন্দ্র নাকি দখল করে রেখেছে, লোকজনদের নাকি পেটাচ্ছে xxxxx xxxxxxর লোকেরা। এইটা একটা দেশ? ছিঃ" (xxxxx xxxxxx - জনৈক একজন মেয়র প্রার্থী)। উক্ত সাংবাদিকের স্ট্যাটাসটি তে কমেন্টগুলো-ও বেশ মজাদার ছিল। একজন লিখল, "কি ব্যাপার ভাই, যেখানেই খোঁজ নিতেছি সেখানেই নাকি কেন্দ্র দখল!! তারপরও হয়তো কাল পত্রিকায় দেখব "ফেনীতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে।" "। পরবর্তী কমেন্টে সাংবাদিক লিখল, "তথাপিও ভোট দিতে গেলাম, ছোটখাটো সাংবাদিক পরিচয়ে রুমে ঢুকতে পারলাম। দেখলাম এখনো ঠিকমতো দাঁড়িগোঁফ ওঠে নি এমন সব ছেলেরা ম্যারাথন সিল মেরে যাচ্ছে ব্যালটে, জানালো আমার ভোটটা নাকি তারাই দিয়ে দিয়েছে। ক্যামেরা বের করতে গেলেই একজন ভদ্রভাবে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো। 'দোয়াতকলম আর ফুটবল, আর কোনো কথা নাই, ***** ভাই চলে যান...' চলে এলাম আমি।" তিনি এখানেই থামেননি। আরও যোগ করলেন, " বাহ্! শহরে কিছুক্ষণ পরপরই বোম ফাটানো হচ্ছে। জয়নাল হাজারীর মৃত আত্মা বুঝি xxxxx xxxxxxxx কাঁধে সওয়ার হয়ে ফিরে এলো আবার আমার শহরে। আতংক তৈরি করে সব ভোটারকে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে, বোমের শব্দ শুনে অনেকে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না, কেন্দ্রগুলো মানুষশূন্য অথচ একশ পার্সেন্ট ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়েই শেষ হবে এই 'শান্তিপূর্ণ' নির্বাচন..." অতঃপর তার এক বন্ধু কমেন্টে লিখল, "তাহলে এই অবস্থা !!! যদিও এখনও খবরের সত্য তা কতটুকু জানিনা। মাঝে মাঝে মুখে চলে আসে আমার দেশে ভাল কিছু হবে না। কিন্ত মুখ থেকে বের করতে পারি না।"

একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সন্তানের স্ট্যাটাস ছিল এমন, "আরেকবার সত্যের পরাজয় হল। ..আর আজ বুঝলাম সরলতার এই জগতে কোন দাম নাই। ধিক্কার এই অলস সমাজকে।" তার এক বন্ধুর কমেন্ট ছিল এমন, "জোর যার মুল্লুক তার। তাই তো হলো। Hate this"। আরেকজনের স্ট্যাটাস ছিল এমন, "is it called election ? ? ! ! ! !"। এক যুবক তো এই ভোট কে আজব ইলেকশন বলে অভিহিত করেছে। তার ভাষ্য, "খুব আজব ভোট হলো আমাদের এলাকাতে আর আমরা হা করে দেখলাম" তার বন্ধুর দাবি, "এই ভোট আমরা মানি না"

এক যুবক ঢাকা থেকে বসে স্ট্যাটাসে লিখল, "ফেনীতে নাকি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে.. হা.. হা.. হা.." এতো হতাশার পরেও দিনের শেষে কারো কারো স্ট্যাটাসে ছিল আনন্দের ঝিলিক। "at last আমাদের কেন্দ্রে আমরা জিতছি" -একজন তার সব বন্ধুকে এভাবেই জানিয়ে দিল তার প্রিয় প্রার্থীর জয়ের খবর। আবার কেউ কেউ তার নিকটাত্মীয় প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য ধন্যবাদ জানাতে ভুললেননা ভোটারদের।

এতকিছুর পরও কাল সকালের পত্রিকায় হয়তো পড়তে হবে "ফেনীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে তবে কিছু কেন্দ্র অজ্ঞাত পরিচয়ধারীরা দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল" !! এই হলো বাংলাদেশ.. এই ফেনী!!

লিখেছেন -  মোশারফ হোসেন জিটু